সাইবার বুলিং কি এবং এর প্রকারভেদ
সাইবার বুলিং আসলে কী (What is cyber bullying)?
সাইবার বুলিং হচ্ছে একটি ইংরেজী শব্দ। সাইবার (cyber) শব্দটির আভিধানিক অর্থ- অনলাইন জগৎ। অর্থাৎ, সাইবার শব্দটি দ্বারা অনলাইনে যত প্রকার কর্মকান্ড সংগঠিত হয়ে থাকে তাকে বোঝানো হয়। এবং বুলিং (bullying) শব্দের আভিধানিক অর্থ- কাউকে অপ্রত্যাশিত আক্রমণ এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। বুলিং শব্দটি এসেছে “বুলিজম” শব্দটি থেকে। দুজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা কাটাকাটির কারণে কোনো ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সামাজিকভাবে হেয় করাকে বুলিজম বলা হয়।
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচিত বিষয় হতে আমরা বুঝতে পারি অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন ব্যক্তিকে সামাজিক ভাবে হেয় করার জন্য ঘটানো বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপকে সাইবার বুলিং (cyber bullying) বলা হয়।
সাইবার বুলিং অনেকভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে । সাইবার বুলিং এর প্রধান কয়েকটি রূপ সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো-
হ্যারাসমেন্ট বা হয়রানি: হয়রানি ঘটে যখন একজন সাইবার বুলি একজন ভিকটিমকে ক্রমাগত এবং ক্ষতিকর অনলাইন বার্তা পাঠায়। এই বার্তাগুলিতে হুমকি থাকতে পারে
এক্সক্লুশন বা বর্জন: ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কারণ ব্যতিত কাওকে বারবার বিভিন্ন গ্রুপ এক্টিভিটি থেকে বাদ রাখলে সেটি এক্সক্লুশন বা বর্জনের অন্তর্ভূক্ত। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অফলাইন বুলিং এর অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়। তবে এটি অনলাইনের মাধ্যমেও করা হতে পারে। কাওকে বারবার ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কারণ ব্যতিত পরিচিতদের মধ্যকার গ্রুপে যুক্ত না করে, পরবর্তীতে এই বিষয়ে তাকে খোঁচা দেওয়া অনলাইন তথা সাইবার বুলিং এর অংশ।
সাইবারস্টকিং: অনলাইনে কাউকে নজরদারি করা বা পর্যবেক্ষণ করাকে সাইবারস্টকিং বলে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ এবং হুমকিও দিতে পারে। সাইবারস্টকিং এবং অফলাইন স্টকিং উভয়ই ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। অপরাীকে শাস্তি দিতে একজন ভুক্তভোগী তাদের অপরাধীর বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ দাখিল করতে পারে।
আউটিং: আপনাকে সমাজের সামনে ছোট করার জন্য আপনার অনুমতি ব্যতীত আপনার তথ্যগুলো প্রকাশ্যে শেয়ার করাকে আউটিং বলে। একে ডক্সিংও বলা হয়।
ফ্রেপিং: ফ্লিপিং বলতে বুঝায় আপনার নাম ও আপনার তথ্য ব্যবহার করে কেউ আপনার অনুমতি ব্যতীত সোশ্যাল মিডিয়াতে অনুপযুক্ত তথ্য শেয়ার করা । এই বুলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কারো খ্যাতি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ট্রোলিং: সব ধরনের ট্রোলিংকে সাইবার বুলিং এর অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কোনো ব্যক্তিকে মানসিক ভাবে আঘাত করার আশায় অনলাইনে তাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য , আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে; এইধরনের কর্মকাণ্ডকে মূলত ট্রোলিং বলা হয় । আর এ ধরনের ট্রোলিংকেই মূলত সাইবার বুলিং বলা হয়
ডিসিং: কাউকে কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে ভুল তথ্য দিয়ে সেই ব্যক্তিকে সমাজের অন্য মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া কিংবা এই ধরনের সব কাজগুলোকে মূলত ডিসিং বলা হয়ে থাকে । সাইবার বুলি অনলাইন পোস্ট বা ব্যক্তিগত বার্তার মাধ্যমে এটি করে, এর ফলে ব্যক্তিটির সাথে অন্যান্য মানুষের সম্পর্ক খারাপ হয় এবং সে মানসিক ভাবে বিষন্নতায় ভোগে।
ছদ্মবেশ: অনলাইনে নিজে পরিচয় গোপন রেখে অন্যের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ যদি খারাপ কাজ করে থাকে কিংবা বিভ্রান্ত মুলক কর্মকাণ্ড করে, তাহলে যে ব্যক্তিটির পরিচয় ব্যবহার করা হয় সে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়, এটি সাইবার বুলিং হিসেবে পরিচিত।
প্রতারণা: কারো ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে তার গোপনীয় এবং সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার করে অনলাইনে ভাইরাল করলে সেটি সাইবার বুলিং এর অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ ব্যক্তিটি অপরাধীকে বিশ্বাস করেই তাকে তথ্যগুলো দিয়েছে । সুতরাং ব্যক্তিটির উচিত ছিল ,সেগুলো সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা , ভাইরাল করা নয় ।
ক্যাটফিশিং: কেউ যদি মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে কারো সাথে বন্ধুত্বে জড়িয়ে , প্রেমের বন্ধন তৈরি করে তার বিশ্বাসযোগ্য মানুষে পরিণত হয়ে ব্যক্তিটির সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে পরবর্তীতে তা অনলাইনে শেয়ার করলে সেটি ক্যাটফিশিং হয় এবং এটি সাইবার বুলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত । ক্যাটফিশিং এ শিকার হওয়া ব্যক্তিরা মানসিকভাবে প্রচণ্ড রকমের খারাপ অবস্থায় থাকে , যার ফলে তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়।
অন্যান্য বিষয় যা সাইবার বুলিংয়ের আওতাভুক্ত :
ফেক আইডি: কোন ব্যক্তি যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি আইডি খুলে কোন ব্যক্তিকে মেসেজ প্রদানের মাধ্যমে বিরক্ত করে, বাজে কথাবার্তার ইঙ্গিত দেয় তাহলে সেটিও সাইবার বুলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
গ্রুপে অ্যাড: কেউ যদি আপনার অনুমতি ব্যতীত কোন বাজে গ্রুপে বারবার এড করতে থাকে সেটিও সাইবার বুলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
কমেন্ট বক্স/ফেসবুক স্টোরি: কেউ যদি মাত্রাতিক্ত ভাবে আপনার পোস্টের কমেন্ট বক্সে কিংবা ফেসবুক স্টোরির রিপ্লাইয়ে বাজে মন্তব্য বা সমালোচনা করে এবং সেটির ফলে যদি আপনার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, তাহলে সেটি সাইবার বুলিং।
ট্যাগ/ মেনশন: কেউ যদি তার কোন বাজে পোস্টে বারবার আপনার অনুমতি ব্যতীত আপনার আইডিকে ট্যাগ করে কিংবা বাজে পোস্টে বারবার আপনাকে ইঙ্গিত করে বাজে কিছু বোঝানোর জন্য মেনশন করে সেটিও সাইবার বুলিং
গুজব: কেউ যদি আপনার সম্বন্ধে অযথা মজা করার ছলে হলেও আপনাকে মাত্রা তিক্ত ভাবে ছোট করে কিংবা আপনার সম্বন্ধে কোন গুজব রটায় সেটি ও সাইবার বুলিং।
মানসিক পরিবর্তন: কোন ব্যক্তি যদি উপরোক্ত কোন ঘটনায় আপনার সাথে না করে শুধুমাত্র মেসেজে কিংবা কলে এমন কোন কথা বলে যে কথায় আপনি কষ্ট পান এবং যার ফলে আপনি ভালো থাকতে পারছেন না, আপনি মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্থ তাহলে সেটিও সাইবার বুলিং এর পর্যায়ে পড়ে ।
এক কথায় অনলাইন জগতে ঘটে যাওয়া কোন কিছু যদি আপনার মনস্তাত্ত্বিক বা মানসিক অবস্থা পরিবর্তন, সামাজিক জীবন- যাপন পরিবর্তনে সক্ষম হয় তাহলে তাকে সাইবার বুলিং বলে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে চুপ করে বসে থেকে সাইবার বুলিংকে সমর্থন না করে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে সাহস নিয়ে তা প্রতিবাদ করা উচিত। তাহলেই রুখবে সাইবার বুলিং, কমবে তরুণ তরুণীদের আত্মহত্যা, আমরা পাবো নিরাপদ ইন্টারনেট। পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশে।
ব্লগটি লিখেছেন: তামীমা তাবাসসুম তুবা, ইসরাত জাহান ধীরা, আবিদ হাসান
No comments